• ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার রাত ১২:০৫
S M Tajul Islam অক্টোবর ১৭, ২০২৫

শিক্ষা ব্যবস্থা উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত, সংস্কারের বদলে দরকার নতুন করে গঠন

ঢাকা : বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহ হিল আমান আজমি। তিনি বলেন, এটি এখন একটি বহুমুখী ও অগোছালো ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যার কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা বা জাতীয় লক্ষ্য নেই।

শিক্ষার মাধ্যমে যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত জ্ঞান, মূল্যবোধ, কৌতূহল ও সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার কথা, সেখানে বরং এ ব্যবস্থা তাদের চিন্তা ও অনুসন্ধানী মনোভাবকে দমন করছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একজন মানুষকে নৈতিকভাবে সৎ, মূল্যবোধে উজ্জীবিত এবং সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাধীনতার পর ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাধ্যতামূলক আরবি ও ইসলামিয়াত শিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছিল যার মাধ্যমে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়। পরে জিয়াউর রহমান এগুলো পুনরায় চালু করলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজমি বলেন, জাতীয় পাঠ্যক্রম, ইংরেজি মাধ্যম, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড এবং বিভিন্ন ধারার মাদরাসা দাখিল, কওমি, হেফজ সব মিলিয়ে এমন এক বিশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যার ফলে কোনো একক জাতীয় মানদণ্ড নেই। ‘চুপ করো সংস্কৃতি’ শিক্ষার্থীদের কৌতূহল নষ্ট করছে, আর মুখস্থনির্ভর পদ্ধতি তাদের সৃজনশীল চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলেই আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও বাস্তব দক্ষতায় পিছিয়ে থাকে।

তিনি আরও যোগ করেন, এ ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার কারণেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে আছে, আর উন্নত দেশগুলো জ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে সামান্য সংস্কার করে ঠিক করা সম্ভব নয়; একে সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি রাজনৈতিক নেতারা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, এমনকি তাদের পা ধরে সালাম করেন তাহলে সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা বহুগুণ বাড়বে।

মানবিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবিকতার। ইসলামও মানবিকতা শেখায়, আর আল্লাহর প্রতি প্রকৃত আত্মসমর্পণই সেই মানবিকতার সর্বোচ্চ প্রকাশ।

অন্যদিকে, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা খানম বলেন, শিক্ষককে শুধু ‘জ্ঞানদাতা’ নয়, বরং ‘ম্যানেজার’ বা ‘গাইড’ হিসেবে কাজ করতে হবে। শিক্ষক তার আদর্শ, চরিত্র ও কথার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে অনুপ্রাণিত করবেন যাতে সেই প্রভাব তাদের আত্মায় প্রতিফলিত হয়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধভিত্তিক কারিকুলাম অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সততা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম ও মানবিকতা এ মূল্যবোধ থেকেই গড়ে ওঠে সামাজিক দায়বদ্ধতা। শিক্ষা ব্যবস্থায় এগুলো যুক্ত না হলে প্রকৃত দেশপ্রেম তৈরি সম্ভব নয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলি বলেন, ভালো ছাত্রছাত্রীদের প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দিলে সমাজে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। শিক্ষার্থীরা তখন ভাববে, আমিও একদিন এমন হতে পারি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কূটনীতিক সাকিব আলি। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহ হিল আমান আজমি, মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, ফেরদৌস আরা খানম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুজ্জামান (কীনোট স্পিকার)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *