• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সোমবার দুপুর ১:১১
S M Tajul Islam অক্টোবর ১৯, ২০২৪

সীসাযুক্ত পণ্য নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে দেশের তরুণ

ঢাকা : আজ ঢাকার মাঠে নেমেছেন সীসাযুক্ত পণ্য নিষিদ্ধ করার দাবিতে শতাধিক তরুণ-তরুণী। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাপ্ত হওয়া একটি র‍্যালিতে অংশ নেন তারা।

ঢাকা ১৯ অক্টোবর ২০২৪ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো কতৃক ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই র‍্যালিটি আন্তর্জাতিক সীসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধ সপ্তাহ (আইএলপিপিডাব্লিউ) ২০২৪ এর অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়, যার প্রতিপাদ্য ছিল “উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ শুরু হোক সীসামুক্তভাবে।”

বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে সীসা বিষক্রিয়া একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সীসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। সামান্য পরিমাণ সীসার সংস্পর্শও শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে মেধাশক্তি হ্রাস, শিখন অসুবিধা এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, সীসার সংস্পর্শে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যার বেশিরভাগই শিশু। ২০১০ সাল থেকে এসডোর ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে বিএসটিআই দ্বারা বাংলাদেশে গৃহস্থালির রঙে সীসার মাত্রা ৯০ পিপিএম (parts per million) নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শিল্প রঙের ক্ষেত্রে এখনো কোনো নিয়ম ধার্য করা হয়নি, যা শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, সীসা ব্যাটারি, খেলনা, বাসনপত্র প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি মসলায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে, যা আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে। তাই সব ক্ষেত্রে এটি নিষিদ্ধ করা জরুরী।

তরুন-নেতৃত্বাধীন এই র‍্যালির উদ্দেশ্য ছিল চলমান এই জনস্বাস্থ্য সংকটের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ এবং শিশুদের এই অদৃশ্য বিষ থেকে রক্ষা করার জন্য আরও কঠোর নিয়মের প্রয়োগ। “উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ শুরু হোক সীসামুক্তভাবে” শ্লোগানে র‍্যালিটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে জাতীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন গঠন করে শেষ হয়। তরুণরা নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা সীসাযুক্ত সব রঙ নিষিদ্ধ করেন এবং পরিবেশে সীসা সংস্পর্শ কমাতে বিদ্যমান আইনগুলো কার্যকর করেন।

র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারী এক তরুণ বলেন, “আমরা জানি সীসা বিষক্রিয়া আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারে, অথচ আমাদের চারপাশের অনেক পণ্যে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা আজ এখানে এসেছি সীসা মুক্ত ভবিষ্যৎ চাইতে—কারণ আমাদের সুস্থ ও নিরাপদে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে।” এই বার্তাটি পুরো ইভেন্ট জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যা সরকারের আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

র‍্যালির মাধ্যমে জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে তারা কঠোর নিয়ম তৈরি করেন এবং তা কার্যকর করেন। শিশুদের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশকে সব উৎস থেকে সীসা দূর করতে হবে এবং সকলের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য।

র‍্যালির বার্তা ছিল স্পষ্ট- পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। বাংলাদেশকে অবশ্যই শিশুদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সীসাযুক্ত সকল পণ্য থেকে সীসা দূর করতে হবে এবং একটি সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *