
কোম্পানীগঞ্জের পিয়াইন নদীর ইজারাবহির্ভূত এলাকার তীর কেটে নেওয়া হয়েছে বালু
সিলেট ব্যুরো: চার্জশিটভুক্ত মামলার আসামি হলেও এখনও বেপরোয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ওই ইউপি সদস্যের নজর রয়েছে পিয়াইন নদীর বালু লুটে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পিয়াইন নদীর ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে বালু লুটের অন্যতম নেপথ্য কারিগর এই দেলোয়ার হোসেন জীবন। সম্প্রতি তাঁর লোকজনের দ্বারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর তা নদীর তীরেই মজুত করা হচ্ছে। ইউপি সদস্য জীবনের নামে এভাবে একাধিক স্থানে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু মজুতের অভিযোগ রয়েছে।
ভোলাগঞ্জের পাথরকাণ্ডের পর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দিকে নজর দেয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে কৌশলী হয়ে ওঠে লুটেরারা। সুযোগ বুঝে রাতে কিংবা খুব ভোরে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে তাদের শ্রমিকরা। একই সঙ্গে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে মজুত করে রাখা প্রায় ১৫ লাখ ঘনফুট বালু সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। শনিবার শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে পিয়াইন নদীতে মজুত বালু সরিয়ে নেওয়ার সময় একটি স্টিল বডির নৌকা আটক করেন স্থানীয়রা। পরে উপজেলা প্রশাসন তা জব্দ করে। নৌকা আটকের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউপি সদস্য জীবন সেই নৌকার জব্দ করা হ্যান্ডল ফিরিয়ে নিতে এক যুবকের সঙ্গে টানাটানি করছেন। অথচ গত চার বছরে একাধিক মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এজহারভুক্ত আসামি হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন বিতর্কিত এই ইউপি সদস্য।
গত বছর বালু লুটের অভিযোগে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ের করা দুটি মামলার চার্জশিটভুক্ত (অভিযোগপত্র) আসামি জীবন। সম্প্রতি তাঁকে বরখাস্ত ও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিক অভিযোগও করা হয়েছে। মামলা ও নানা অভিযোগের পরও বালুর ওপর থেকে নজর সরছে না তাঁর। এদিকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো মামলার আসামি জীবনকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জাগছে।
সীমান্তবর্তী পিয়াইন নদীর কোম্পানীগঞ্জ অংশের শেরপুর ও নিজগাঁও মৌজার ১১৫ দশমিক ৬৯ একর বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। তবে ইজারার বাইরে নদীর লামনীগাঁও, শিমুলতলা, কোম্পানীগঞ্জ ও শমশেরনগর মৌজা এলাকা থেকে নিয়মিত অবৈধভাবে লুট করা হচ্ছে বালু। এখানকার বালু লুটের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবন। সঙ্গে আছেন তাঁর ভাই ইকবাল হোসেন আরিফও। সম্প্রতি সাদা পাথরকাণ্ডে দুদক যে ৪২ জনের তালিকা করেছে, সেখানেও তাদের নাম রয়েছে।
পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে গত বছরের ২৫ মার্চ মামলা করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী শিপলু কুমার দে। একই বছরের ৩০ জুলাই ওই মামলায় জীবনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা। একই বছরের ১৩ মে আরেকটি মামলা করেন ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আলকাছ মিয়া। সেই মামলায় ওই বছরের ৩০ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলায়ও চার্জশিটভুক্ত আসামি ইউপি সদস্য জীবন। এ ছাড়া ২০২১ সালের একটি মামলারও আসামি তিনি।
চলতি বছর বালুমহাল ইজারা দেওয়ার পর ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন জীবনসহ ১০ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র। তারা বালু লুট করার পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে মজুত করে রাখেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে ইউএনও রবিন মিয়ার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটকের পর কারাদণ্ড দেন। জব্দ করা হয় ড্রেজার মেশিন ও দুটি বাল্কহেড।
এদিকে বালু লুটের অভিযোগে ইউপি সদস্য জীবনকে বরখাস্তের দাবি জানিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুটি অভিযোগের তদন্ত চলছে।