• ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার সকাল ৯:০৯
S M Tajul Islam সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি আমার দেশ সাংবাদিককে

জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: ভোলার চরফ্যাশনে অস্তিত্ববিহীন প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি। বিষয়টি অনেকের জানা থাকা সত্ত্বেও কেউ বিষয়টি প্রকাশ বা প্রতিবাদ করতে পারেন না। কারণ, তার স্বামী রেজাউল করিম বাধন চরফ্যাশন চৌকি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ। এই দুই পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবাধে লুটপাট করছেন ইউএনও মিথি। এ নিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর ‘অস্তিত্বহীন প্রকল্পের নামে ইউএনওর লুটপাট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে আমার দেশ।

সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে পাঠক মহলে। এলাকায় রীতিমত হইচই পড়ে যায়। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনেও। এরপর থেকে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্নজনের মাধ্যমে ফোন করে সতর্ক করা, শাসানোর পাশাপাশি হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনও মিথি কিংবা তার স্বামী বাধন কেউই প্রতিবাদ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগও অস্বীকার করেননি। কিন্তু চরফ্যাশন আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বুধবার সকালে পিপি ও জিপির নেতৃত্বে সমিতির ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে অপপ্রচারসহ বিভিন্নভাবে হত্যা মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জনমনে প্রশ্ন যার বিরুদ্ধে নিউজ হয়েছে, তিনি প্রতিবাদ জানাননি; কিন্তু আইনজীবী সমিতি কার স্বার্থে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানাল।

চরফ্যাশন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুব মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না। যা বলার লিখিত বক্তব্যে বলেছি।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার দেশ-এ প্রকাশিত সংবাদে ইউএনও মিথির স্বামী চরফ্যাশন চৌকি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ বাধন আদালতে কর্মরত থাকায় কেউ ভয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার অনিয়মের প্রতিবাদ করছে না এমন বক্তব্যের আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

মাহাবুব মিয়া আরো বলেন, যদি কোনো আইনজীবী বক্তব্য দেন, সেটা তার নিজস্ব বক্তব্য হবে, আইনজীবী সমিতির নয়।

এদিকে আমার দেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের কোথাও বাধন দুর্নীতি কিংবা অনিয়ম করছেন এমন কথা বলা হয়নি। কেবল ইউএনও মিথি ও তার স্বামীর কর্মস্থল একই উপজেলায় এটা বলা হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জেও একসঙ্গে চাকরি করার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পিপি হযরত আলী হিরন। তিনি কেন আইনজীবী সমিতির ব্যানারে আমার দেশ-এ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন, তার কারণ জানতে অধিকতর অনুসন্ধান চালায় আমার দেশ। এতে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট হিরন দীর্ঘ আইনি পেশায় তার কাছে তেমন কোনো মামলা ছিল না। ছিল না নিজস্ব চেম্বারও।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চলতেন। জুলাই বিপ্লবের পর বিভিন্ন মহলে তদবির করে চরফ্যাশন চৌকি আদালতের পিপি বনে যাওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

একটি সূত্র জানায়, চরফ্যাশন আদালতে আওয়ামী ক্যাডার ও তাদের দোসরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জামিনে বের করছেন পিপি হিরন। পাশাপাশি চরফ্যাশনের ইউএনও মিথির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন নিয়মিত। যার কারণে ইউএনও মিথির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে পিপি হিরন তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান।

সংবাদ প্রকাশের পর থেকে আমার দেশ-এর চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধিকে মোবাইল ফোনে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন পিপি হিরন। এ-সংক্রান্ত সব প্রমাণ প্রতিনিধির কাছে সংরক্ষিত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *