• ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার রাত ১২:৫৮
S M Tajul Islam জানুয়ারি ১০, ২০২৫

১০ কোটিতে ইউরোপীয় পাসপোর্ট বাগিয়ে নেয়ার ফন্দি তারেক সিদ্দিকের স্ত্রী-মেয়ের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক দশক আগে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের ছোট্ট দেশ মাল্টার পাসপোর্ট বাগিয়ে নেয়ার ফন্দি করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি শাহীন সিদ্দিক এবং তার চাচাত বোন বুশরা সিদ্দিক। তবে তাদের পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। শাহীন সিদ্দিকের স্বামী হলেন মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি ক্ষমতাচ্যুত এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন।

এই ঘটনার দু’বছর আগে ২০১৩ সালে শুধুমাত্র নিজের জন্য মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তারেক আহমেদ সিদ্দিক। তবে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ থাকায় তাকে পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। ফাঁস হওয়া নথির বরাতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ওই সময় বিনিয়োগের মাধ্যমে মাল্টার পাসপোর্ট দেয়ার কাজটি করত হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। অভিবাসন সংশ্লিষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ওই সময় সিদ্ধান্ত নেয় শাহীন সিদ্দিক প্রচ্ছায়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকার মূল্যবান সরকারি জমি কুক্ষিগত করেছেন। এ কারণে তাকে পাসপোর্ট দেয়া হবে না। শাহীন তার পাসপোর্টের আবেদনে প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।

শাহীন ও তার মেয়ে বুশরা ২০১৫ সালে পাসপোর্টের জন্য যে আবেদন করেছিলেন, সেটি পেতে তাদের যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড লাগত। এরসঙ্গে ফি হিসেবে আরও ৭০ হাজার পাউন্ড নিত হেনলি।

আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখিয়েছিলেন। ১১ বারে এই অর্থ তার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস কী ছিল সেটি স্পষ্ট নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টার‌ন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন আছে তা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারবেন না।

অপরদিকে তারেক ও শাহীন সিদ্দিকের মেয়ে ওই সময় স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি তার ঠিকানা দিয়েছিলেন গ্র্যান্ড গোথিক ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট। যেটি টিউলিপের লন্ডনের কিংস ক্রস ফ্ল্যাটের খুব কাছে অবস্থিত। এই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি কেন টিউলিপকে এত দামী ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

প্রথমবার প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করায় পাসপোর্ট না দেয়ায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের আবেদনে শাহীন সিদ্দিক দাবি করেন চট্টগ্রামের দ্য আর্ট প্রেস নামের একটি কোম্পানির পরিচালক তিনি। যেটি ১৯২৬ সালে তার বাবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই কোম্পানি নিয়ে সন্তষ্ট না হওয়ায় তাকে ও তার মেয়েকে ওই সময় আর পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি।

বুশরা লন্ডনে পড়াশোনা শেষে জেপি মর্গান ব্যাংকে কয়েকদিন চাকরি করেন। এরপর চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরোতে পাঁচ বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এই অর্থও তাকে তার বাবা-মা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অক্টোবরে তারিক জামিল সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *