• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার বিকাল ৫:২৪
S M Tajul Islam জানুয়ারি ৭, ২০২৫

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে ২৪-এর গণহত্যার বিচার করতে হবে

ঢাকা : দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে ২৪-এর গণহত্যার বিচার করতে হবে। দেশে গত ১৬ বছরধরে চালানো সব গুম খুন জুলুম নির্যাতনের বিচার করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা গাজী ভাই-এর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ২৫ বছর ধরে। আমিও পেশাজীবী আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পেশাজীবীদের সমাবেশে সরকারের বাধা উপেক্ষা করে সফলভাবে সম্মেলন করেছিলেন রুহুল আমিন গাজী। সেই সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। গাজী ভাইয়ের সাথে আমরা একটি লং মার্চ করেছিলাম টিপাইমুখ বাঁধের অভিমুখে। দ্বিতীয় লংমার্চ করেছিলাম আখাউড়ায় তিতাস নদীতে বাঁধের প্রতিবাদে। আমরা তিতাসের বাঁধে। ইন্ডিয়ান হেজেমনিকে আর বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে দিব না আমরা। পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার জন্য বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকালে জাহাজ বাড়িতে ৯ জনকে ডিবি হেফাজত থেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমরা সেটা আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করি।

৬ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে রুহুল আমিন গাজী স্মৃতি ফাউন্ডেশন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল আমিন গাজী স্মৃতি ফাউন্ডেশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নিউনেশনের সাবেক সম্পাদক মস্তফা কামাল মজুমদার, ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, মিসেস রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন। এছাড়া রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন তার পিতার স্মৃতিচারণ করেন।

আমার দেশ পত্রিকা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকালে চারজনকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। এইসব হত্যাকা-ের বিচার করতে হবে। নাসির উদ্দীন পিন্টুকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা হয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে। আব্দুর রহিমকে অক্সিজেন না দিয়ে আইসিইউতে হত্যা করা হয়েছে। রুহুল আমিন গাজী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদ্য প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ছিলেন একজন আপসহীন সাংবাদিক নেতা। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনে তিনি সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রুহুল আমিন গাজীর মতো এমন সাহসী নেতৃত্ব সাংবাদিক জগতে বিরল। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তখনই তিনি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অসুস্থ থাকার পরও তিনি রাজপথে নেমে সাংবাদিকদের সাহস জুগিয়েছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, গাজী ভাই দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। মাহমুদুর রহমান ভাইও দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন এবং বিদেশে থাকতে হয়েছে স্বৈরাচারের কারণে। গাজী ভাই পেশাজীবীদের অনেক প্রোগ্রাম সফল করেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং পেশাজীবীদের জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, রুহুল আমিন গাজী ভাই নেই, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তাকে চিনি। তিনি ছিলেন একজন অসীম সাহসী নেতা। প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের আগের দিনও তিনি অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, একটি রাষ্ট্রের মূল শক্তি সার্বভৌম শক্তি। এই শক্তিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে দিয়ে দেয় দেশ। গত ১৬ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গাজী ভাই ছিলেন। পেশাজীবী হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের অনেক ভূমিকা ছিল। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের পেশা বিরোধী সব কালাকানুনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তাকে ১৭ মাস কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তার পরিবারকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের অন্যতম সর্বোচ্চ এই নেতার মারাত্মক কিডনির সমস্যা ছিল। এরপরও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার তাকে গ্রেফতার করে ১৭ মাস জেলে রাখে। সেখানে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম বলেন, রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুধু এটিই নয় তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। একটি দিনের জন্যও তিনি বিরতি দেননি।

রুহুল আমিন গাজীর মেয়ে উনাইজা বলেন, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমার বাবার কাজগুলো এগিয়ে দিয়ে যাব। বাবার প্রিয় জায়গা প্রেসক্লাব।

রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন বলেন, আমি ও আমার পরিবার বাবার মতো দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার বাবাকে যেভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে তাতে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি খুবই দেশপ্রেমিক ছিলেন। সব সময় দেশের মানুষের কথা ভাবতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *