জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উত্তরার শহীদদের তালিকা প্রকাশ
ঢাকা : আজ ৭ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার শুধুমাত্র উত্তরার রাজপথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শহীদদের তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স‘ ও ‘চব্বিশের উত্তরা‘ নামক দু‘টি বেসরকারি সংস্থা।
এর মধ্যে শুধুমাত্র ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স‘ ৯২ জন এবং ‘চব্বিশের উত্তরা‘ নামক সংগঠনটি তাদের তালিকায় ৪৬ জন শহীদের বিবরণ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। যদিও দু‘টি তালিকা সমন্বয় করে শহীদের সংখ্যা আমরা ৯০ জনের মতো পেয়েছি। প্রোগ্রাম দু‘টির আয়োজক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে শহীদের এই সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ অনেক লাশ গুম করা হয়েছে এবং এখনও অনেকে অজ্ঞাতনামা। কিন্তু যে কাজ সরকার করার কথা, সে কাজ সরকার না করার কারণেই এরকম বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। যে জন্য উপস্থিত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দু‘টি প্রোগ্রামে ১৮টি শহীদ পরিবার তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। যে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এক শোক বিহ্বল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শহীদদের দু’টি তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাদের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী, ১৯ জন চাকরিজীবী, ১০ জন ব্যবসায়ী, ৫ জন গাড়ি/রিকশাচালক, ২ জন মসজিদের ইমাম, ১ জন ডাক্তার ও ১১ জন অজ্ঞাতনামা আছেন। সময় অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে শহীদদের এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ জুলাই ২০, ১৯ জুলাই ২২, ৪ আগস্ট ৭, ৫ আগস্ট ৪২ ও ৭ আগস্ট ১ জন। আর বয়স ভিত্তিক পরিসংখ্যান করলে ১০ বছরের কম বয়সী ১ জন, ১০-২০ বছর বয়সী ১৭ জন, ২১-৩০ বছর বয়সী ২৬ জন, ৩১-৪০ বছর বয়সী ১৮ জন, ৪১-৫০ বছর বয়সী ১১ জন, ৫১-৬০ বছর বয়সী ২ জন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স‘র মুখপাত্র ফান্তাসির মাহমুদ বলেন, এই গণঅভূত্থানে উত্তরার ছিলো এক বীরোচিত অধ্যায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা শহীদ ও আহতদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণে তথ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টারি ফ্লিম তৈরি ও প্রচার এবং ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই জুলাইয়ের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষন ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে। আমরা চাই এই বিপ্লবের ইতিহাসে কোনোভাবেই যেনো বিকৃতি না ঘটে। আমাদের উদ্দেশ্য “যেকোনো মূল্যে জুলাই বিপ্লবকে বাচিঁয়ে রাখা‘’। আমরা বিশ্বাস করি, ‘’যদি জুলাই ভুলে যায় বাঙালি, হেরে যাবে বাংলাদেশ”।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের অতর্কিত হামলার পর ১৬ জুলাই ছাত্র-জনতা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বুকের ভেতর দূর্গ গড়ে নেমে আসে রাজপথে। উত্তরার এই বীরত্বের ইতিহাস রচিত হতে থাকে সেদিন থেকেই। ১৮ ও ১৯ জুলাই উত্তরায় যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তা দেখেছে সারাবিশ্ব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে আমরা নতুন স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশ হারিয়েছে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের তাজা প্রাণ। আহত হয়েছেন ৩০,০০০ এরও বেশি, যাদের অনেকেই চিরতরে অন্ধ বা পঙ্গু হয়ে গেছেন।
১৮ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট উত্তরায় শাহাদাত বরণ করেছেন অগণিত মানুষ। তবে ঠিক কতোজন শহীদ হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আমরা জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স চেষ্টা করছি গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী শহীদদের তালিকা যথাযথভাবে তৈরি করার। আমরা চাই জুলাইয়ের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষন ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে।
সারাদেশে জুলাইয়ে শহীদদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সরকারকে উদাত্ত আহ্বান জানান তারা। একই সাথে বীর শহীদদের রাষ্টীয় মর্যাদায় ভূষিত করা এবং শহীদ পরিবারের পূনর্বাসন ও আর্থিক সহযোগীতার দাবিও করেন তারা।
উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে জুলাই রিভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স এর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান, যুগ্ম আহ্বায়ক আহমদ সামরান ও সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ। অন্যদিকে মুগ্ধ মঞ্চে সোহানা সাকী ও সামিয়া রহমানের উপস্থাপনায় ‘চব্বিশের উত্তরা‘র প্রোগ্রামে মূল ভূমিকা পালন করেন সংগঠক শরীফ-উল-আনোয়ার সজ্জন।




























