স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক এলজিইডি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী “শেখ মুজাক্কা জাহের” সরকার পতনেই খোলস পাল্টান
ঢাকা : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহেরের বিরুদ্ধে প্রকল্পভেদে ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পিডি নিয়োগের পায়তারা করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, নতুন প্রকল্পগুলোতে পিডি নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের ফান্ড সংগ্রহ করে এলজিইডির মেধাক্রম তালিকা ভেঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য দালালদের পিছনে ছুঁটতে শুরু করেছেন তিনি।
সূত্রমতে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা-১ শাখার উপসচিব মো. নুরে আলম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এলজিইডির বিভিন্ন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানান। এই চিঠি আসার পর শুরু হয় এই সিন্ডিকেটের দৌঁড়ঝাপ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির কয়েকজন প্রকৌশলী বলেন, পিডি বাণিজ্যের কারণে আগে সৎ এবং মেধাবী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক হতে পারত না। আমাদের ধারণা ছিল এবার বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকার কারণে বোধহয় এ অবস্থা দূর হবে। কিন্তু মুজাক্কা জাহের যা শুরু করেছে তাতে এবারও সৎ এবং মেধাবী প্রকৌশলীদের প্রকল্প পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহের আওয়ামী লীগের লোক হওয়া সত্ত্বেও সরকার পতনের পরপর বোল পাল্টিয়ে বিএনপিপন্থী হয়েছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে মহা প্রতাপের সাথে শেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। মতিয়া চৌধুরীর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মাঠ পর্যায়ের জুনিয়র কর্মকর্তা হয়েও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ২৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের মিউনিসিপ্যাল গভার্ননেন্স এন্ড সার্ভিসেস প্রকল্পের পিডি নিয়োগ পান।
কথিত আছে পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে প্রাক্কলন অনুমোদন, দরপত্র অনুমোদন এবং অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে মোট শতকরা ৩-৪ ভাগ টাকা নিতেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম দুর্নীতি করে তিনি ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এই অবৈধ শতকোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত স্ত্রী এবং দুই সন্তানের কাছে পাচার করেছেন। তদন্ত করলে এই মহা দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর সব দুর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রধান প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করে গত দেড়মাসে কমপক্ষে দুই শতাধিক সহকারী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের বিভিন্ন জেলায় বদলি বাণিজ্য করে। ফলে এই বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মুজাক্কা জাহেরের বিরুদ্ধে। প্রতিটি বদলিতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলজিইডিতে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এসব বদলি এবং নিয়োগ বানিজ্য করে সিরিয়াল ভেঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করছেন মুজাক্কা জাহের এবং তার সিন্ডিকেট। সরকার পতনের পরের দিনই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর জন্য বরাদ্ধকৃত টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ভি-৮, গাড়ী নং: ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬৩১০ দখল করে নেয়।
এ বিষয়ে মুজাক্কা জাহেরের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।