
সেনাবাহিনীর উপর হামলা, সামপ্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ
ডেস্ক : খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সেনাবাহিনীর উপর হামলা, খাগড়াছড়িতে মসজিদ ভাংচুর, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গাড়ি ভাংচুর, দোকানপাট লুট, বাজার ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ রোজ রবিবার গণমাধ্যম পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এই দাবি জানান সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায।
বিবৃতিতে জানানো হয়, তুচ্ছ ঘটনার নাটক সাজিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ষড়যন্ত্র মূলক এক ধর্ষণবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজন করে উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ। এসময় মহাসমাবেশের নামে খাগড়াছড়ি সদরে বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব চালায় ইউপিডিএফ এর নেতৃত্বাধীন উগ্রপন্থী সংগঠন সমূহের সদস্যরা। এসময় সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা। এক পর্যায়ে জেলার শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে খাগড়াছড়ি সদর । এর মাঝেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও স্থানীয় বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালায়, এতে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার গুইমার উপজেলায় সেনাবাহিনীকে লক্ষ করে আবারও হমলা চালানো এতে ১১জন সেনা সদস্য ও স্থানীয় অন্তত ৩০ নিরীহ মানুষ আহত হয়। একি সময় উপজেলার একটি বাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নি সংযোগ ঘটায় উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘুষ্ঠি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র ও পাহাড়কে উত্তপ্ত করার নীল নকশা,পরিকল্পনা করছে উপজাতি সন্ত্রাসী মহল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে তাদের অপপ্রচার যেন থামছেই না। তাদের নিত্যদিনের স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” অথচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়কে শান্ত রাখার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় একটি ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। অভিযোগ কারি খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক কিশোরী। তাকে ধর্ষণের অভিযোগে শয়ন শীল (১৯) ও তার সহযোগী হিসাবে ২ জন চাকমা ছেলে এক জন মারমা ছেলে আরও একটি হিন্দু ছেলেকে অভিযুক্ত করা হয়। সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি শয়ন শীলকে দ্রুত গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আরও ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্য জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পরও পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এর সরাসরি ইন্ধনে তাদের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসীদের দিয়ে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ইচ্ছাকৃতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগান তুলে তারা ধর্ষণের ঘটনার মতো মানবিক ইস্যুকেও রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপান্তরিত করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়—উপজাতি সন্ত্রাসীরা যেকোনো অঘটন ঘটলেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
বাস্তবে সেনাবাহিনী বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জটিল ভৌগোলিক পরিবেশেও পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করছে। অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবাতেও সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করছে। অথচ, এই সেনাবাহিনীই যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে এগিয়ে আসে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে, সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের ন্যায়বিচারের দাবি আড়াল হয়ে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠছে।
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।” তাদের ভূমিকা শুধু পার্বত্য অঞ্চলে নয়, পুরো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপরিসীম। তাই যেকোনো ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার প্রতিহত করতে হবে এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী অপরিহার্য। অপরাধীদের সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মিথ্যাচার যতই হোক, জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা দিয়ে এই বাহিনী সর্বদা দেশের গৌরবের প্রতীক হয়েই থাকবে।
সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলাকারী উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি এবং ইউপিডিএফ, জেএসএস সহ সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে কঠোর ভাবে তাদের দমন করার জন্য সরকারি নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানায় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। অন্যথায় দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতাকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রতিষ্ঠায় উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী নির্মূলে জোরালে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।