সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন, আগেও তিনবার চেষ্টা করেছিলেন
বেশ অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ। ১৯৯২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন তিনি। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরা তখন বিউটি পার্লার ব্যবসায় জড়িত। সালমানের দুটি সিনেমার পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন তিনি। সিনেমায় স্টাইল ও ফ্যাশন বিষয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন সালমান। প্রচার আছে, স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করেই আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ। যদিও ভক্তরা সেটা আজও বিশ্বাস করেন না। কিন্তু মৃত্যুর ২৬ বছর পর প্রথম স্বামী সালমানকে নিয়ে এসব কী বলছেন সামিরা!
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবরই বলে আসছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘খুন করা হয়নি, সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন।’ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা। গতকাল শুক্রবার রাতে দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে সামিরাকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে দেখা গেছে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন সালমান।
সিনেমাজগতে সালমান শাহ নামে পরিচিত এই অভিনেতার পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর একে একে থানা-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে। হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তও। সব তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও প্রতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার পর পরিবারের আপত্তির (নারাজি) মুখে তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন হয়।
সালমান কেন আত্মহত্যা করবেন? প্রথম স্বামী সালমান শাহর আত্মহত্যা প্রসঙ্গে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সামিরা বলেছেন, ‘ও (ইমন) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই ন্যাচার। এর আগেও তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে সেটা জানা যাবে। সেখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে আছে তৃতীয় রেকর্ড। তিনটাই আমাদের বিয়ের আগের ঘটনা। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার ওর কিছু একটা হয়েছিল, সেটার জন্য।’
সালমান কেন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠলেন, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সামিরা বলেন, ‘ইমন কিন্তু ছবিতে ক্যারিয়ার করতে চায়নি। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। এরশাদ (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) ও নীলা চৌধুরীকে নিয়ে এক ঘটনায় নীলা চৌধুরী জেলে যান। তিনি ময়মনসিংহ কারাগারে থাকা অবস্থায় ইমন একদিনও তার মাকে দেখতে যায়নি। কেন? ইমন কিন্তু তার মাকে মা বা আম্মা বলে ডাকতো না, বলতো “মহিলা”। আমাদের সামনে অবশ্য ওভাবে বলতো না। নীলা চৌধুরী যখন শুটিং সেটে যেতেন, ইমন বলতো, “মহিলা আসছে”। সেটা শুনে ডলি জহুর আন্টি একদিন তাকে বকা দিয়ে বলেছিলেন। বলেছিলেন, “তুই এভাবে ডাকছিস কেন? তোর তো মা হয়।” ইমন তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।’
সামিরা আরও বললেন, ‘ইমনের মনে অনেক কষ্ট ছিল। ইমন অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছিল, যেগুলো ওর দেখার কথা ছিল না। বাচ্চাদের ওপর সেসব ঘটনা বাজে প্রভাব ফেলে। আমরা এখন যেমন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন তো এগুলো করতাম না। তখন আমাদের কোনো কাউন্সিলিংয়ের সুযোগ ছিল না। ছিল না রিহ্যাব। এখন রিহ্যাব আছে, কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমরা তেমন কিছু অনুভব করলে কারও সঙ্গে আলাপ করে তা ভাঙার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা। তখন তো ইমন এসব কাউকে বলতে পারেনি। “সালমান শাহ” হওয়ার পর তো আরও বলতে পারেনি। যাকেই বলবে, সেটা নিউজ হয়ে যাবে।’
মাত্র ২৫ বছরের জীবনে ২৭টি সিনেমা করেছিলেন সালমান শাহ। দেশের চলচ্চিত্রে ভিন্নধারার সূচনা হয়েছিল সালমানের অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। তার অভিনীত সিনেমা মানেই নিশ্চিত সাফল্য, প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া দর্শক, প্রযোজকের মুনাফা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল সালমান শাহর ৫৪তম জন্মদিন।