• ২৮শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার সকাল ১১:৪৩
S M Tajul Islam আগস্ট ২৬, ২০২৫

সংসদে নারীদের ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি

ঢাকা : জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, সংসদে নারীদের ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি নিয়ে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এর সেমিনার অনুষ্ঠিত।

আজ ২৪ আগস্ট, ২০২৫ বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এর আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এর সভাপতি সীমা দত্ত ও পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় সুপ্তি।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা, আইনজীবী আবেদা গুলরুখ, স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু, অটোচালক সাহিদা আক্তার, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সুলতানা,মিরনজিল্লা হরিজন কলোনী ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য পূজা রানী।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ” আইনের ফাঁক ফোঁকরের মাধ্যমে নারীরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিলেই ধর্ষণের শাস্তি মাফ হয়ে যাবে এই মানসিকতা সমাজে আছে। বিচারক বা আইনজীবীদের মধ্যেও এই মনোভাব আছে। বিচারকদের সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। ধর্ষণ ও অন্য অপরাধের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ধর্ষণ করে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। অপমান, অবজ্ঞার মাধ্যমে নারীকে পিছিয়ে রাখে যাতে ক্ষমতার লড়াইয়ে নারী পিছিয়ে পরে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে ধর্ষণের পর খুন বেড়ে যাবে। নারীর সুরক্ষা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।”
সামিনা লুৎফা বলেন, “নারীদেরকে ঘরের ভেতর আটকে রাখার অপতৎপরতা চলছে। যারা এটা চায় এর পেছনে তাদের স্বার্থ আছে। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার দিতে চায় না। নারীর ভালো করার নামে, ভালোবাসার নামে তার অধিকার হরণ করা হয়। নারীর কষ্টগুলো এই সমাজে পুরুষরা পুরোপুরি বুঝবে না। নারী তার এই কষ্টের কথা এলাকায় বলবে সেই প্রতিনিধি কোথায়?
এই নারীরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জান বাজি রেখে লড়েছে, পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। পুলিশের হাত থেকে ছেলেদের রক্ষা করেছে। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের পর নারীদের উপর হয়রানি বেড়েছে। পথে ঘাটে যেমন তেমনি অনলাইনে। অভ্যুত্থানের সময় রাজপথে নারী হাজির হয়েছিল কর্তাসত্ত্বা নিয়ে। এটাকেই আজকে আক্রমণ করে থামিয়ে দিতে চায়। এই অবস্থা থেকে নারীদের বের করতে হলে নারীকে প্রবলভাবে রাজনীতির মাঠে হাজির থাকতে হবে। সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই আগামী নির্বাচনে ৩০% ও এরপরের নির্বাচনে ৫০% আসন নিশ্চিত করতে। ”

স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু বলেন, “গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। রাজপথে অভ্যুত্থানের সময় লড়েছে। শুধু রাজপথে লড়াই নয়, অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, শ্রুশ্রুষা করার ক্ষেত্রেও নারীদের ভূমিকা অনেক। অভ্যুত্থানের সময় অনেক হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যেতো না। অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এই কাজ করতে হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য আমরা অর্গানিকভাবে সংগঠিত হয়েছি। এরকম স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান যতগুলো হয়েছে, সেখানে যারা কাজ করছে তাদের ৯৫ শতাংশই নারী।”

আইনজীবী আবেদা গুলরুখ বলেন, “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয় ইয়াসমিনকে হত্যার প্রতিবাদে ধর্ষণবিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো তাকে কেন্দ্র করে। ধর্ষণ আমাদের সমাজে এখনো মারাত্মক ব্যাধি। এটা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। ফলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। বিগত শতাব্দীর শেষের দশকে আমরা যখন আন্দোলন করেছি এর প্রতিবাদে তখন আমাদের অর্থাৎ নারীদেরই দোষারোপ করা হয়েছে, ভ্রষ্টা বলে, পতিতা বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে। এখনও যারা লড়াই করছে তাদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। বরং অন্যদিক থেকে এটা আরও বেড়েছে। অনলাইনে বডি শেমিং করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে থেমে গেলে চলবে না, এই লড়াই জারি রাখতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সীমা দত্ত বলেন, “বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ ভাগ নারী। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু নীতি নির্ধারণী পরিসরে নারীর কন্ঠস্বরকে পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যভাবে বলতে গেলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতাকে খর্ব করা হচ্ছে, সেটা রাষ্ট্র কিংবা পরিবার যেখানেই হউক না কেন।
গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাক্ষা ছিল নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী পুরুষের সমমর্যাদা-সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রকেই নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সহায়তা করতে হবে, যৌন নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দরিদ্র, প্রান্তিক নারীদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সংগ্রামী ও মহীয়সী নারীদের জীবন সংগ্রাম শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

নারীদের মর্যাদার এ লড়াই নারী ও পুরুষ সকলের। কারণ নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান না দিয়ে সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। নারীর উপর বৈষম্য, অবিচার ও অপমান বজায় রেখে কোন সমাজ ও জাতি বিকশিত হতে পারে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে আমরা এই অঙ্গীকার করছি, এ লড়াইকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব, মুক্ত ও স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমাদের সকল অধিকার আমরা আদায় করব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *