
সংখ্যানুপাতিক ভোটের দাবি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ পথ সুগম করতে পারে: তারেক রহমান
ঢাকা : সংখ্যানুপাতিক ভোটের দাবি দেশে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ-ফ্যাসিবাদ-চরমপন্থার’ বিকাশের পথ সুগম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার (২১ জুলাই) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন চত্বরে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘১৬ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
আলোচনার শুরুতে উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ দুর্ঘটনা এবং ফ্যাসিস্ট আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনে করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ফ্যাসিস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের ভূমিকার ওপরে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ জুলাই অভ্যুত্থানের পেশাজীবীদের ওপর একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ যার মোড়কও উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে।
পরে আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
পেশাজীবীদের এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, কয়েকটা রাজনৈতিক দল হঠাৎ করেই দেশে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন দাবি করছেন, সেই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী যে ব্যবস্থা প্রবর্তনের অর্থ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থার বিকাশের পথ সুগম করে দেওয়া। সংখ্যানুপাতিক যে নির্বাচনী ব্যবস্থা এটা কিন্তু বিভ্রান্তিমূলক এবং সরকার অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে বা উঠবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। দেশের জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য চাইলে কোনোভাবেই আমরা মনে করি, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত নয়।
তারেক রহমান বলেন, এই ধরনের (পিআর সিষ্টেম) দাবি উত্থাপনের বিষয়টিকে কোনো কোনো দল গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দেখলেও জনগণের সঙ্গে বিএনপি বাংলাদেশকে সংখ্যানুপাতিক যে পিআর সিস্টেম বা এই নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় বলেই আমরা মনে করি।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কারণে তারেক রহমানের অনুরোধে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয় এবং আহতদের রক্তের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
ঘটনার পরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চিকিৎসকসহ পেশাজীবীদের কাজের তদারকি করেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কায়সার কামালের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রয়াত মেহেদি হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ, শাহরিয়ার সুলতানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, মুত্তাকিম বিল্লাহর স্ত্রী নাঈমা বিল্লাহ মিতু, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, সাফওয়ান আখতারের বাবা আখতারুজ্জামান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল প্রয়াত আবদুল রহীমের ছেলে আবরার রহীম এবং পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বিডিআরের সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নাসরিন হক, প্রয়াত অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদের মেয়ে অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার ছেলে ডা. নাসিম মূসা পরশ, গিয়াস কামাল চৌধুরীর ছেলে রফিক-উম মুনির চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।