• ১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার সকাল ৮:৩৮
S M Tajul Islam মে ৩০, ২০২৫

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাণী

এস এম তাজুল ইসলাম : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিম্নোক্ত বাণী দিয়েছেন :-

বাণী
“মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূণ:প্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এই কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদৎবার্ষিকীতে আমি তাঁর অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার মহান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ।

জীবদ্দশায় জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, ৭১’ এর মরণপন লড়াই এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণে তাঁর অনন্য অবদান আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ৭১’ সালের প্রারম্ভে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বিধা ও সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়ার কালূরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষনা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, শ্রমিক, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হানাদার বাহিনীর ধ্বংসের শক্তিকে প্রতিহত করে দেশবাসী বিজয়ের দিকে ধাবিত হয়। বিজয় লাভের পর দেশীয় শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক দমনমুলক শাসন শোষনের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের নাগরিক অধিকারগুলো হরণ করা হয়, গণতন্ত্রকে দেয়া হয় মাটিচাপা। চালু করা হয় নির্মম একদলীয় দু:শাসন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে উচ্ছেদ করা হয় স্বেচ্ছাতন্ত্রের আক্রমণে। একদলীয় প্রভুত্ববাদের অধীনতার নাগপাশে বন্দী করা হয় সারা জাতিকে। চলমান অরাজকতার সেই সময়ে সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রসহ নাগরিক স্বাধীনতা। গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক সার্থকতা নিশ্চিত করেন। শুরু করেন উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করা। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেন। ব্যক্তিজীবনেও দূর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন। তাঁর অন্তর্গত স্বচ্ছতা তাঁকে দিয়েছে এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতা। তাঁর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের কারণেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা শুরু হয় এবং অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশবিরোধী চক্র তাঁর বিরুদ্ধে শুরু করে গভীর ষড়যন্ত্র। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। নিখাদ দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে কেউ কখনো তাঁর বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি সারাজীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে গেছেন।
জনমনে ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দীর্ঘ ষোল বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিল। জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। নির্যাতন ও জুলুম ছিল পতিত ফ্যাসিবাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র হাতিয়ার। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে এক মাফিয়া অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী। এমতাবস্থায় হারানো গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে ছাত্র-জনতাসহ সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গতবছর ৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটায়। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে এখন পূর্ণাঙ্গ রুপ দিতে হবে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, পরমতসহিষ্ণুতাসহ সকল নাগরিক অধিকার নির্ভয়ে প্রয়োগ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে-যাতে গণতন্ত্র স্থায়ী রুপ লাভ করে। জাতীয় জীবনের সকল সংকট, সংগ্রাম ও বিনির্মাণে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভিক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার আদর্শ, দেশপ্রেম, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রেরণার উৎস। এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদৎবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *