• ২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪:৩৫
S M Tajul Islam জুন ২৫, ২০২৫

মাদকের ভয়াবহ গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এস এম তাজুল ইসলাম : যুবসমাজ দেশের ভবিষ্যত। তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে, এগিয়ে নেবে। কথাগুলো এখন অনেকটা পুস্তকীয় ভাষা এবং কথার কথায় পরিণত হয়েছে। জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে গেছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। দেশের যুব সমাজ মাদকাসক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মাদকের ভয়াবহ গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

২৫ জুন ২০২৫, বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

২৬ জুন মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে মাদক বিরোধী সংগঠন “এন্টি ড্রাগ সোসাইটি”র সভাপতি জহিরুল হক রানা সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মহাপরিচালক এম আব্দুল্লাহ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ তোশারফ আলী, নিউজপেজবিডি-এনপিবি এর সম্পাদক মোঃ আল হাদী, সাবেক যুবদল নেতা নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, কবি ও কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক আহমেদ মতিউর রহমান, পিজি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল আলম রঞ্জু, সিনিয়র সাংবাদিক কবির হোসেন টিটু, শহিদুল ইসলাম, এমজি কিবরিয়া, রিয়াজুর রহমান রিয়াজ, এস এম তাজুল ইসলাম, প্রদীপ কুমার পাল, প্রিন্স জাকির প্রমুখ।

প্রধান অতিথি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের সিংহভাগ যুবসমাজকে মাদক গ্রাস করে ফেলছে, এ বিষয়টি রাজনৈতিক দলের নেতারা খুব একটা খেয়াল করছেন না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা পুলিশর ওসি ও এসপিদের নিয়ন্ত্রণ করেন একই সাথে তারা মাদকের ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার কারণে দেশে মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রশাসন কিছুই করতে পারে না।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ে আমরা মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম ও মাদক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সরাসরি মাদকের ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছিলো। দেশের প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে কক্সবাজারের সাবেক এমপি বদি মাদকসম্রাটে পরিণত হয়েছিল সবাই জানেন।

বক্তারা বলেন, দেশে মাদকাসক্তির একটি পরিসংখ্যান দিলে বোঝা যাবে, তরুণ যুবসমাজ আজ কোন পথে এবং কিভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বছরের গড় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যুবকরা বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছে। মাদকসেবিদের শতকরা ৬০.৭৮ ভাগই এসএসসি পাস করা। ২০ থেকে ৪০ বছরের মাদকসেবীর সংখ্যা শতকরা ৮১.৩৭ ভাগ। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব যুবসমাজকে মাদকাসক্তি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের চিরায়ত একান্নবর্তী পারিবারিক প্রথার বিলুপ্তি, আধুনিকতার যথার্থ অর্থ অনুধাবন করতে না পেরে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো, উঠতি তরুণ-তরুণীদের চালচলন ও আচার-আচরণের পরিবর্তনের দিকে অভিভাবকদের বেখেয়াল হওয়া, সন্তান কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, তার খোঁজ না রাখা এবং বাবা-মায়ের মধ্যকার অমিল ও বিচ্ছিন্নতা, সন্তানকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তারুণ্যের শখ, অ্যাডভেঞ্চার, নেশাসক্ত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ার মাধ্যমেও তরুণ-তরুণী মাদকাসক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি মাদক চোরাকারবারি চক্রের সাথে জড়িয়ে এবং বাহক হয়ে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা অনেকে জানি, মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে বহু পরিবার ধংস হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক নেশাসক্ত সন্তানকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েও নিস্তার পাচ্ছেন না। সন্তানের করুণ অবস্থা সইতে না পেরে অনেক বাবা-মা আত্মহত্যা করেছেন। অনেককে মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব ঘটনাকে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন বলে উপেক্ষা করা হলেও, বর্তমান বাস্তবতায় তা ভয়ংকর ও উদ্বেগজনক। এর প্রতিকারে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে জোরালো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দিয়েছে মাদক, যা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *