• ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার সকাল ৭:৪২
S M Tajul Islam অক্টোবর ১২, ২০২৫

ময়মনসিংহে বাস চলাচল বন্ধ ষড়যন্ত্রমূলক, নেপথ্যে ব্যক্তিস্বার্থ

ময়মনসিংহ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আন্তজেলার সড়কগুলোতে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। মূলত বাংলাদেশ শ্রমিক ও মালিক ফেডারেশন এবং ঢাকা শ্রমিক ও মালিক ফেডারেশনের যৌথ সিদ্ধান্তেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলার শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের। তবে এই পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে ব্যক্তিস্বার্থের কারসাজি জড়িত বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে জেলার মটর মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় নাখোশ সাধারণ যাত্রীরা। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা।

বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর মাহমুদ আলম।

তিনি বলেন, একটি চক্র পরিবহন সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাস চলাচল বন্ধ করেছে। এর সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন পরিবহন নেতা ও মালিক জড়িত। মূলত তাদের ইন্ধনেই ঢাকা থেকে শ্রমিক ও মালিক ফেডারেশন বাস চলাচল বন্ধ করেছে। গত শুক্রবার থেকে আজ (রোববার) পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহগুলো সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ মিলবে।

জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী বলেন, আমরা বাস বন্ধ করিনি। মূলত বাংলাদেশ শ্রমিক ও মালিক ফেডারেশন এবং ঢাকা শ্রমিক ও মালিক ফেডারেশন যৌথভাবে বাস চলাচল বন্ধ করেছে। সকালে আমাদের কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকজন চালক ও হেলপার জয়দেবপুর চৌরাস্তায় মারধরের শিকার হয়েছে। আমাদের দাবি শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ। আমাদের শ্রমিক ভাইকে জেলে রেখে আমরা কাজ করতে পারি না।

একই ধরনের বক্তব্য জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নজরুল ইসলামের। তিনি বলেন, গাড়ি চললে আমাদের উপার্জন হয়, না চললে উপার্জন বন্ধ থাকে। কোন মালিকের গাড়ি চলবে আর কোন গাড়ি চলবে না এটা নির্ধারণ করা আমাদের কাজ না। এর জন্য মালিক সমিতি ও ফেডারেশন নেতারা রয়েছে। মূলত পরিবহন মালিক ও নেতা জসীম ভাই প্রকাশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য। এতে শ্রমিকদের কোনো হাত নেই।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এনসিপির জেলা কমিটির সদস্য ও পরিবহন নেতা মো. জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি একজন জুলাইযোদ্ধাকে অপদস্ত করার প্রতিবাদ করেছি। এর বাইরে আমার কোনো বিষয়ে সম্পৃক্ততা নেই।

তবে জসীম উদ্দিনের বড় ভাই এবং জেলা মটর মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শরাফ উদ্দিন কোহিনূর বলেন, মূলত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলাতক আসামি আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাস বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই এই অহেতুক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে শামীমপন্থি দোসররা জড়িত।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম বলেন, মূলত ঢাকা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, এটাই সত্য। আমরা চেষ্টা করছি দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সামাধান করতে। আশা করছি দ্রুত বিষয়টি সামাধান হবে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কাজী আকতার উল আলম বলেন, ঘটনাটি সামাধানে আমরা ঢাকা ও জেলার মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। মনে হচ্ছে স্থানীয় মালিক সমিতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। তারপরও আমরা ঘটনাটি সামাধানে আশাবাদী।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ
ঘটনার সূত্র প্রসঙ্গে জানা যায়, গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হান ঢাকায় যাওয়ার জন্য ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনালে যান। এ সময় টিকেট কেটে দেরিতে টার্মিনালে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়ে যায়। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ওই জুলাইযোদ্ধার বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার একপর্যায়ে এক শ্রমিককে মারধর ও তালা ঝুলিয়ে ইউনাইটেড কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ইউনাইটেডের ব্যানারে চলা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলাতক আসামি আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাস বন্ধসহ ৪ দফা দাবি জানায়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অরুন দন্দ্র দাস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। একই সঙ্গে আমিনুল হক শামীমের বাস বন্ধসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে আমিনুল হক শামীমের বাস বন্ধসহ শ্রমিক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর শিকারিকান্দা বাইপাস এলাকায় পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় শ্রমিকরা। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কিন্তু রহস্যজনকভাবে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কারসাজি করে রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে হঠাৎ করেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আন্তজেলার (শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা) সড়কগুলোতে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দূরপাল্লার যাত্রীরা। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেকের।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে জেলার পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা চলছে। এতে দুই দফা কমিটি গঠন, টার্মিনালে হামলা ও ভাঙচুর এবং মামলার ঘটনাও ঘটেছে। যা জেলায় কর্মরত প্রায় ১৮ হাজার পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *