
ফ্যাসিস্টের সহযোগি হোমিও বৈদ্য এস এম সারওয়ারের প্রতারণা
ঢাকা: চিকিৎস্যা সনদ ছাড়াই নিজেকে “এশিয়ার বিখ্যাত ক্যান্সার গবেষক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্ত ডাক্তার” পরিচয় দিয়ে স্বঘোষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. এস এম সারওয়ার রোগীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসএসসি পাস করেই চিকিৎসা জগতে পা রাখা এই ব্যক্তি রাজধানীর পুরানা পল্টন ও হবিগঞ্জে চেম্বার খুলে নিজেকে ক্যান্সার চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
স্বঘোষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ফ্যাসিষ্ট ডা. এস এম সারওয়ার ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগি ও সহযোগির ভূমিকা পালন করেছেন। ফ্যাসিষ্ট ডা. এস এম সারোয়ার আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হতে নানান ধরনের প্রতারণা ও দলীয় তেলবাজির আশ্রয় নিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন। ফ্যাসিষ্ট ডা. এস এম সারোয়ার বিগত একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। ফ্যাসিষ্ট ডা. এস এম সারোয়ার বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের নামে ঢাকা-৮ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী হতে ফ্যাসিষ্ট ডা. এস এম সারোয়ার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন সহ আওয়ামী লীগের প্রায় সকল দলীয় অনুষ্ঠানে তাঁর কর্মী বাহিনী সহ অংশগ্রহণ করতেন, যার সেসময়ের বহু ছবি ও ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুর্নবাসন ও মামলা-গ্রেফতার থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট, ইসলামি যুবসেনা, ইসলামি ছাত্রসেনা সহ কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ফ্যাসিস্ট ডা. এস এম সারোয়ারের বিরুদ্ধে।
ক্যান্সার চিকিৎস্যায় প্রতারণার বিষয়ে ফ্যাসিস্ট ডা. এস এম সারোয়ারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তিন দফা লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা বিভাগ লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে প্রমাণ পেয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা বিভাগ তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ায় স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ডা. এসএম সারোয়ার বিভিন্নভাবে অভিযোগকারীদের হুমকি ও হয়রানির করছেন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎস্যায় ইনজেকশনের কোনো ব্যবহার বা ইনজেকশনের চিকিৎস্যা সেবার নিয়ম না থাকলেও স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ফ্যাসিস্ট ডা. এসএম সারোয়ার নড়াইলের এক শিশুকে মাথার টিউমার চিকিৎস্যায় ইনজেকশন দেয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়। তাঁর কাছে হোমিও চিকিৎস্যা নিতে আসা বহু রোগির অকাল মৃত্যু সহ একটি রোগের সঙ্গে আরো রোগ বেড়ে যায় রোগিদের। এতে বহু রোগি এখন নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
এসব বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন যে, স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ফ্যাসিস্ট ডা. এসএম সারোয়ারের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত রোগি ও তাদের স্বজনেরা মামলা করতে চাইলেও সারওয়ারের বাহিনী হুমকি দিয়ে হয়রানি করছে। এছাড়া টাকার বিনিময়ে অনেক রোগি ও নিহত স্বজনদের সাথে সমঝোতা করেছে ফ্যাসিস্ট ডা. এসএম সারোয়ার।
প্রভাবশালী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান পাখি সারওয়ারের বিরুদ্ধে প্রথম লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে। স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ফ্যাসিস্ট ডা. এসএম সারোয়ার তার শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতার কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায়, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফা নোটিশেও তাকে সতর্ক করা হয়। সর্বশেষ নোটিশে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
আইনজীবীর দাবি, স্বঘোষিত ক্যান্সার গবেষক ফ্যাসিস্ট ডা. এসএম সারোয়ার তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে নিরীহ রোগীদের থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি দিন প্রায় ১৫০ রোগী দেখেন তিনি। রোগীদের অভিযোগ, তিনি কোনো পরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে “ক্যান্সার হয়েছে” বলে ঘোষণা দিয়ে চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। অনেক সময় রোগী সুস্থ থাকা সত্ত্বেও ভয়ভীতি দেখিয়ে চিকিৎসা দেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা বিভাগ স্মারক নং: স্বাঃ অধিঃ/হোঃদেঃচিঃ/তদন্ত ২০২৫/৬৪৪৬ অনুসারে ২২ জুন ২০২৫ তারিখে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে সারওয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সারওয়ার “জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, ক্যান্সার গবেষক, অধ্যক্ষ” ইত্যাদি মিথ্যা পদবি ব্যবহার