নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত হাত অথবা পা হারাচ্ছে: সাকলায়েন রাসেল
ঢাকা : হার্টের মত পায়েও ব্লক হয়, হাতেও ব্লক হয়। তবে কোন কারনে হার্ট অথবা পায়ের রক্তনালী ৬ ঘণ্টার মত বন্ধ থাকলে এর মধ্যে যদি চিকিৎসা দেয়া না হয় উক্ত হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়,অনেক মানুষ এই বিষয়টি জানে না ফলে নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত হাত অথবা পা হারাচ্ছে বলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শনিবার ২ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির উদ্যোগ জাতীয় রক্তনালী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সাকলায়েন রাসেল এই কথা বলেন।
ডা সাকলায়েন রাসেল বলেন,বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির উদ্যোগে প্রথমবারের মত ‘জাতীয় রক্তনালী দিবস, ২০২৪, গত ১ নভেম্বর, ২০২৪ পালিত হয়েছে, কিন্তু দিবসটি শুক্রবার হওয়ায় আজ ২নভেম্বর আপনাদেরকে ডেকেছি, এই দিবসটির বিভিন্ন দিক আপনাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।
তিনি বলেন,বাংলাদেশে প্রতিনিয়ার মানুষ কোন না কোন কারনে হাত পা হারাচ্ছে। হার্টের মত পায়েও ব্লক হয়, । তবে কোন কারনে হার্ট অথবা পায়ের রক্তনালী ৬ ঘণ্টার মত বন্ধ থাকলে এর মধ্যে যদি চিকিৎসা দেয়া না হয় উক্ত হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়,অনেক মানুষ এই বিষয়টি জানে না ফলে নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত হাত অথবা পা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের মৃতুর অন্যতম প্রধান কারন দুঘটনা। দুর্ঘটনার পতিত হলে একজন রোগীকে সেবার জন্য যে সমস্ত জরুরি চিকিৎসক প্রয়োজন হয় তার মধ্যে একজন হচ্ছে ভাসকুলার সার্জন কিন্তু বাংলাদেশে ভাসকুলার সার্জন এর সংখ্যা এর খুবই কম।সারাদেশে ভাসকুলার সার্জনদের পদ-পদবির সৃষ্টি না করায় বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জনদের কাজ করার সুযোগ নেই।ফলে যেসব স্থানে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা কোনভাবেই সম্বব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনার কারনেও আমরা প্রতিনিহত হাত পা হারাচ্ছে । এশিয়া মহাদেশে এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস অন্যতম একটি মহামারি আকার ধারন করেছে, ডায়াবেটিসের জটিলতায়েও প্রতিনিয়ত আমরা হাত পা হারাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন,আমেরিকার রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষ পা হারায়। এশিয়ায় নির্দিষ্ট কোন জরিপ না করা হলেও তুলনামূলক ভাবে আরো বেশি। আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাই, তাদেরকে বলতে চাই আপনি ধূমপান থেকে দূরে থাকুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, হঠাৎ করে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে তীব্র ব্যথা হলে দ্রুত একজন ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নিন। পায়ে কোন কারনে ঘা হলে, ইনফেকশন হলে সেটি যদি কোন কারণে দ্রুত না সারে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নিবেন। একজন মানুষের পায়ে কোন গ্যাংগ্ৰিন হলে বা ঘা হলে সেই আঙ্গুলটি বা পাটি কেটে ফেলার আগে ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ নেয়া জরুরি। একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ অবশ্যই প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর এবং একজন সাধারন মানুষ ৩০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি বছর একবার করে তাঁর পায়ের চেকাপ করাবে। একজন মানুষের পা কেটে ফেললে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তার মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০ ভাগ। কারো কারো ক্ষেত্রে এই হারটা আরো বেশি। এমতাবস্থায় আমাদের হাত এবং পায়ের সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের হাত এরং পাগুলো সুস্থ না থাকলে পুরো দেহ অচল হয়ে যেতে বাধ্য, এমনকি আমাদের জীবন ও বিপন্ন হয়ে যেতে বাধ্য তাই আমরা শ্লোগান নিধারণ করেছি, আপনার হাত এবং পা কে বক্ষা করুন তাহলে আপনার জীবন বাচবে।
তিনি বলেন,সেভ লিম্ব, সেভ লাইফ, আমাদের এই ভাসকুলার দিবস এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এই বিষয় গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথ্য অনেক সাধারণ চিকিৎসক ও তেমন সুস্পষ্ট ভাবে জানেন না।অথচ বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত প্রতিসেকেন্ডে কোন না কোন সানুষ ভাসকুলারজনিত সমস্যায় পতিত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় ভাসকুলার সারজেক্টটিকে যেমন এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন, তেমনি সারাদেশে সমস্ত মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জনদের পদ সৃষ্টি করে পদায়ন করা প্রয়োজন। একই সাথে এই রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি আজকের এই মুল কথা গুলো যদি আপনার চ্যানেল এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তুলে ধরা হয়,
সাধারণ মানুষ সাধারণ চিকিৎসকের কাছ থেকে উপকৃত হবে এবং দেশের মানুষ অকাল গাঙ্গুহ থেকে রক্ষা পাবে।
আমাদের পরামর্শ সমূহ।
১।অকাল পঙ্গুত্ব রোধে আপনার পায়ের যত্ন নিন।
২। ভাসকুলার সার্জনের পরামর্শ ছাড়া হাত পা কেটে ফেলা যাবে না।
৩। প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর পায়ের চেক আপ করাবেন।
৪। ভাসকুলার সার্জনের পদ সৃষ্টি করে সরকারি হাসপাতাল এ ভাসকুলার সার্জারি সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।
উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা আবুল হাসান মুহাম্মদ বশার, বক্তব্য রাখেন ডা সামিম রেজ, ডা বজলুর করিম ভূইয়া,ডা মোহাম্মদ আশরাফ আলী, ডা পারভেজ সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।