• ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার ভোর ৫:০৯
S M Tajul Islam অক্টোবর ৬, ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: এআই-ভিত্তিক অপপ্রচার ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

ঢাকা: আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ভিত্তিক অপপ্রচার, গুজব মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর তা মোকাবিলায় সঠিক তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের পরামর্শ সংবাদকর্মীদের।

সোমবার (৬ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শফিক আহমেদ বলেন, সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদা মন্ত্রীর ওপরে রাখতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ। ইসি কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। বিনা ভোটের প্রার্থী নির্বাচন ঠেকাতে একক প্রার্থীর আসনে পুনরায় ভোটের আয়োজন। একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান করা, যাতে দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হয়। গণমাধ্যমে ভোটের খবর সংগ্রহ করতে নীতিমালা সহায়ক না। এতে আমরা কারচুপির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরতে পারবো না। কাজেই গণমাধ্যমের জন্য সহায়ক নীতিমালা করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটের সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো যেতে পারে। এটা নিয়ে দল ও সংস্কার কমিশন কথা বলেছে। যে কোনো অভিযোগ গ্রহণ ও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সুনির্দিষ্ট কেন্দ্র করার প্রয়োজন।

এআই-ভিত্তিক ষড়যন্ত্র বা বিভ্রান্তি মোকাবিলায় গণমাধ্যম ভূমিকা পালন করবে, এমন আশ্বাসও দেন তিনি।

যমুনা টিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমে অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটা আসলে আইনি বিষয় না।

পুলিশ-প্রশাসনের দায়দায়িত্ব ইসিকে নিতে হবে। কেননা, তাদের মধ্যে একটা মনোভাব কাজ করতে পারে যে দায়িত্ব শেষ করলে বাঁচি। কারণ, তারা যেন ভোটের পরে ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে না পড়েন। রাতের ভোট হয়েছে, এতে প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা ছিল। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছেন কে? সিইসি। কাজেই এই বিষয়গুলো দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটকে আমরা যুদ্ধ বলি। ভোটকে আমরা উৎসব বলি। কার সঙ্গে কার যুদ্ধ, কার সঙ্গে কার কতটা উৎসব হবে, এটা তাদের ওপরে ছেড়ে দেন। কিন্তু গত পরশুদিন নরসিংদীতে একজন চাঁদাবাজ পুলিশকে মেরেছে। কাজেই এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। মাঠ কিন্তু কন্ট্রোল করা ভীষণ কঠিন।

তিনি আরও বলেন, আমলাতন্ত্র আস্থাহীনতার জায়গায় চলে গেছে। এই আস্থার জায়গাটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তখন কেবল সাকসেসফুল বলতে পারবেন। কে কোন জার্সিতে খেলছে এতে কোনো যায় আসে না—এই মেসেজটা দিয়ে দিতে হবে। মারতে আসলেও বলতে হবে, না, আমি ব্যালট বাক্স দেবো না।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) মোস্তফা আকমল বলেন, বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার। যেকোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি কোনো নারী কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কিন্তু তিনি ড্যামেজ হয়ে যাবেন। এআই দিয়ে এক-দু’মিনিটের মধ্যে একটা ভুয়া ছবি তৈরি করে ফেলা যায়। ব্যাপক লোকজন নিয়োগ করে কিন্তু প্রোপাগান্ডা চলছে। এটা ইসিকে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি-বাড়ি কিন্তু সেভাবে যাওয়া হয়নি। যারা বাদ পড়েছে, তাদের যদি কোনো সহজ প্রক্রিয়ায় ভোটার করে নেওয়া হয়, ভালো হবে।

আগামী নির্বাচনে গণমাধ্যম কতটা নিরপেক্ষ থাকবে জানি না, তবে এখন পর্যন্ত মালিকদের কোনো হস্তক্ষেপ নাই। আপনারা সহযোগিতা করলে আমরাও সহযোগিতা করতে পারবো। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য সংগ্রহের সুযোগ দিতে হবে। আমরা সব জায়গায় যাবো না। আমাদের টার্গেট থাকে, কোথায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, আপনারা যত দ্রুত আমাদের সঠিক তথ্য দেবেন, আমরা তত দ্রুত প্রচার করবো। এতে প্রোপাগান্ডা, গুজব রোধ করা সম্ভব হবে। ভোট গণনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে প্রচার করলে ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই আপনারা যত দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে পারেন, যদি ইসি থেকে কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়লো দ্রুত দিতে পারেন, তাহলে আমাদের আর মাঠে প্রতিনিধির কাছ থেকে নিতে হয় না। আর আমাদের দেশের এমন প্রবণতা আছে যে, টিভিতে বলেছে মানে আমি জিতেছি। কাজেই আমাদের যত দ্রুত সম্ভব কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্য দেন তাহলে আর ভুল বোঝাবুঝি হবে না।

গ্লোবাল টিভির সিএনই ফেরদৌস মামুন বলেন, ৫ আগস্টের পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাটা কমে গেছে। এখনো পুরোপুরি আসেনি। আস্থা ফেরানোর ব্যাপারে ইসির উদ্যোগ কী, সেটা জানা দরকার। সামনের নির্বাচন অনেক কঠিন হবে।

তিনি বলেন, মূলধারার গণমাধ্যম ইসির জন্য সংকট সৃষ্টি করবে না। মূল সমস্যা তৈরি করবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। গুজব এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। কমিশনকে এজন্য একটা কাঠামো বা সিস্টেম তৈরি করতে হবে, এটা ঠেকানোর জন্য।

তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় যত দীর্ঘ হয়, তত গুজব ছড়িয়ে যায়, সন্দেহ তৈরি হয়। কাজেই প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সময় বেঁধে দিতে হবে যে এত সময়ের মধ্যে গণনা শেষ করতে হবে।

চ্যানেল আই-এর জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার সুযোগ সৃষ্টিতে আমাদের সক্ষমতা আছে কিনা এবং মিশনগুলোর কর্মকর্তারা প্রবাসীদের বিষয়ে আন্তরিক কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। পোস্টাল ব্যালট করা গেলে আমরা ভবিষ্যতে ফিজিক্যাল ভোটদান থেকে হয়তো বেরিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা বড় ব্যাপার। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কতটা সক্রিয় থাকবে কমিশন, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, ভোটের কাজে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের প্রবণতা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে প্রতিদিন ব্রিফ হওয়া উচিত। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে তথ্য নেই। কিন্তু সেটা আমাদের প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি বলেন, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, এআই এবারের নির্বাচনের জন্য ভয়ংকর। আগামীকাল কেউ দেখিয়ে দিতে পারে সিইসি একতারা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। ফ্যাব্রিকেটেড করে দেখিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় মানুষ বিশ্বাস করতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করতে চান। অনেকেই বিশ্বাস না চাইলেও নিজের স্বার্থে ছড়িয়ে দিতে পারে। ৪০ শতাংশ মানুষ মিসইনফরমেশন বিশ্বাস করে।

ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, সংস্কার কমিশন অনেকগুলো কাজ এগিয়ে দিয়েছে, এজন্য আপনারা অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ দেরি করছেন। কিন্তু আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে যে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, সেগুলো আমলে না নিয়েই যদি নীতিমালা করেন তাহলে তো আজকের এই সংলাপ ফলপ্রসূ হলো না। কাজেই নীতিমালা সংশোধন করা উচিত।

তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে। এটা করতে পারবেন কিনা, এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আপনারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন, আমরা ভুল-ত্রুটি ধরার চেষ্টা করবো। কিন্তু সেটা আপনাদের আমলে নিতে হবে। আমরা অতীতেও দেখেছি, গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভাবা হয়। তাই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারবেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন যদি আমলে নিয়ে প্রতিপক্ষ ভাবেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য গোপন করা হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হলফনামা যেটা দিল, আমরা জানি ভুয়া, কিন্তু ইসি সেটা তদন্ত করে দেখলো না। সেটা হলে তো আর হলফনামা দেওয়ার দরকার নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকসহ বেসরকারি চাকরিজীবীরা যেন পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *