• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার রাত ১০:১৭
dainikprithibi অক্টোবর ৯, ২০২৪

ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কেন কমে যায়?

ডেঙ্গু শুধু বেড়েছে, তা-ই নয়, সাম্প্রতিক কালে ডেঙ্গুসংক্রান্ত জটিলতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আর দশটা ভাইরাস জ্বরের মতোই আচরণ করে। তবে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে, জ্বর কমে আসার পরই শুরু হতে পারে কিছু জটিলতা। প্রথম দুই-তিন দিন বেশ তীব্র জ্বর, শরীরব্যথা, অরুচি ইত্যাদি সাধারণ উপসর্গ থাকলেও জ্বরের তিন-চার দিন পর শুরু হয় সংকটপূর্ণ সময়। এ সময় প্লাজমা লিকেজ শুরু হয়, রক্তচাপ কমতে থাকে এবং কখনো কখনো কমে যায় প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা।

কেন কমে প্লাটিলেট?
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করের প্লাটিলেট। অন্যান্য ভাইরাসজনিত জ্বরেও প্লাটিলেট কমে কিন্তু ডেঙ্গুতে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমার একাধিক কারণ আছে। একদিকে ভাইরাসের কারণে হাড়ের মজ্জায় প্লাটিলেটের উৎপাদন কমে যায়, অন্যদিকে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে রক্তে কিছু বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়, যা প্লাটিলেট ধ্বংসের হার বাড়ায়। ফলে ডেঙ্গুতে প্রায় সব রোগীর রক্তেই নানা মাত্রায় প্লাটিলেট কমতে পারে।

প্লাটিলেট কমে যাওয়া কি বিপজ্জনক?
ডেঙ্গু রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্লাজমা লিকেজের সঙ্গে রক্তচাপ কমা বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ আক্রান্ত হওয়াই মূলত দায়ী। কিন্তু রোগী ও রোগীর স্বজনেরা রক্তের প্লাটিলেট নিয়েই অধিকতর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। প্লাটিলেটের স্বাভাবিক সংখ্যা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত এক থেকে দেড় লাখের ভেতর এই মান ওঠানামা করে। মারাত্মক (সিভিয়ার) ডেঙ্গুতে এই সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে আসে, অনেক সময় এটি ১০ হাজারের নিচে নেমে যেতে পারে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, অন্যান্য রোগে প্লাটিলেট যে মাত্রায় কমে গেলে শরীরে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে, ডেঙ্গুতে তার চেয়ে অনেক কমে গেলেও রক্তক্ষরণ তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের মূল জটিলতা কিন্তু প্লাটিলেট কমে যাওয়া নয়, বরং প্লাজমা লিকেজ বা রক্তের তরল অংশ রক্তনালি থেকে বেরিয়ে আসা।

প্লাটিলেট কমে গেলে কী করবেন?
প্লাটিলেট এক থেকে দেড় লাখের ভেতর থাকলে চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই, যদি অন্যান্য সমস্যা না থাকে। এক লাখের নিচে নেমে গেলেও ঘাবড়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, প্লাটিলেটের মাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে প্লাজমা লিকেজ বা শকের মতো জটিলতা থাকতে পারে, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। অনেকেই প্লাটিলেট কমে গেলে অস্থির হয়ে পড়েন। তখন নানা টোটকা ব্যবহার করে প্লাটিলেট বাড়াতে চান। এসব সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। বরং রোগীর রক্তচাপ যাতে না কমে, সে জন্য খাওয়ার স্যালাইন, প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়াটা অনেক জটিলতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে সবকিছুই আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *