• ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার ভোর ৫:০৪
S M Tajul Islam অক্টোবর ৭, ২০২৫

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন- মেরি ই. ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‌্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি।

ইমিউন সিস্টেমের মৌলিক প্রক্রিয়া ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য তারা এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) এই তিন বিজ্ঞানীর নামে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হয়।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) হাজারো জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে।

এই জীবাণুগুলো একে অপরের থেকে ভিন্ন। এগুলো আবার মানবকোষের মতো নিজেদের আড়াল করে রাখতে সক্ষম।

ফলে শরীর বুঝতে পারে না কোন জীবাণু বন্ধু, কে শত্রু। তারপরও মানব শরীর জানে কোনটিকে প্রতিহত, কোনটিকে রক্ষা করতে হবে। শরীর কীভাবে এই কার্যক্রম করে, বিজ্ঞানী মেরি ই. ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‌্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি সেটিই আবিষ্কার করেছেন।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে কেম্পে বলেছেন, এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কার আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কাজ বোঝার ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে কেন আমরা সবাই ভয়াবহ অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হই না, সে উত্তর পাওয়া যাবে তাদের আবিষ্কারে।

১৯৯৫ সালে গবেষণার জগতে প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রথম বড় আবিষ্কারটি করেন জাপানি বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি। সে সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, শরীরের ইমিউন টলারেন্স বা সহনশীলতা কেবল থাইমাসে তৈরি হয়, যেখানে ক্ষতিকর কোষগুলো নির্মূল হয়ে যায়। একে বলা হয় ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’। কিন্তু সাকাগুচি দেখান, ইমিউন সিস্টেম আরও জটিল। তিনি এমন এক নতুন শ্রেণির কোষের সন্ধান দেন, যারা শরীরকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।

এরপর ২০০১ সালে মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‌্যামসডেল আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তারা দেখেন, একটি বিশেষ জাতের ইঁদুর সহজেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ তাদের ‘এফওএসপিথ্রি’ নামে এক জিনে ত্রুটি রয়েছে। পরে তারা প্রমাণ করেন, মানুষের শরীরেও এই জিনে মিউটেশন হলে গুরুতর অটোইমিউন রোগ ইমিউনোডিসরেগুলেশন পলিএন্ডোক্রিনোপ্যাথি এনটেরোপ্যাথি এক্স-লিংকড সিনড্রোম (আইপিইএক্স) দেখা দেয়।

২০০৩ সালে সাকাগুচি এই দুটি আবিষ্কারকে যুক্ত করেন। তিনি দেখান, এফওএসপিথ্রি জিনই সেই কোষগুলোর বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো তিনি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করেছিলেন। এই কোষগুলো এখন পরিচিত ‘রেগুলেটরি টি সেল’ নামে। যারা অন্য ইমিউন কোষগুলোর কর্মকাণ্ড নজরে রাখে এবং নিশ্চিত করে যে শরীর নিজের টিস্যুগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই না করে।

তাদের এই আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেম গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যাকে বলা হয় ‘পেরিফেরাল টলারেন্স’। এর ওপর ভিত্তি করে অটোইমিউন রোগ ও ক্যানসারের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে। পাশাপাশি, এই গবেষণা ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আরও সফল করতে সাহায্য করতে পারে। এরই মধ্যে এসব চিকিৎসা পদ্ধতির কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চলছে।

মেরি ই. ব্রাঙ্কো যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ ফিলোসফি (পিএইচডি) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার। ফ্রেড র‌্যামসডেল ১৯৮৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকসর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত। শিমন সাকাগুচি ১৯৭৬ সালে এমডি ও ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারর ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর তিনি।

নোবেল পুরস্কার থেকে তারা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা অর্জন করেছেন। এ অর্থ তাদের তিনজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *